অতীতে মানুষ যা ভেবেছে পরবর্তীতে তা সত্যি হয়েছে। কল্পনা শুধু কল্পনাতেই আটকে থাকেনি। মানুষ বস্তবেও রূপ দিয়েছে। ব্যয় হয়েছে পরিশ্রম ও সময়। পাখির মতো উড়া, সমুদ্রতলে যাওয়া, চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু আজ যা ঘটে গেল, যে আশা পূর্ণ হল তা এক অসম্ভবকে সম্ভব করা। জ্ঞানের চাইতে বড় কোন আলো নেই, জ্ঞানের চাইতে বড় কোন শক্তি নেই। জ্ঞান সর্বত্র সর্বোচ্চ। এই জ্ঞান কল্পনারই ফল। সাক্সেসফুল মিশন ‘রন্টিস 2080' ।
আমাদের সূর্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী তারাটি হলো ‘প্রক্সিমা সেন্টোরি’ আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়েতে অবসি'ত ‘ত্রিস্টার সিস্টেম’ নামের যে তারকারাজি অবসস্থান করছে, এর একটি হলো প্রক্সিমা সেন্টোরি। বাকি দুটি আলফা সেন্টোরি ‘এ’ এবং আলফা সেন্টোরি ‘বি’। এরা প্রত্যেকেই একেকটি সৌর জগৎ। পৃথিবীসদৃশ নতুন রন্টিস গ্রহটি ওই আলফা সেন্টেরি ‘বি’ সৌর জগতের অংশ। পৃথিবী থেকে রন্টিস এর দূরত্ব ৪.৩ আলোক বর্ষ। ক্রুশ আকৃতির তারকার চিহ্নের মাধ্যমে, পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে আকাশের ২৯ডিগ্রিতে অবস্থানরত আলফা সেন্টোরি দেখা যায়।
মানুষের জানার আগ্রহ আমৃত্যু। যত কল্পনা ততই বাড়ে জ্ঞানের পরিধি। পৃথিবীর তুলনায় একজন মানুষ অকল্পনীয় ছোট। মহাবিশ্বের তুলনায় আমাদের সৌরজগৎ বালুকনার চাইতেও এত ছোট যে ভাবনাতেই আসে না। এই ছোট্ট মানুষের কল্পনা জ্ঞান তাই বলে এত ছোট নয়। তুলনা করা চলে মহা বিশ্বের সাথে। কল্পনা করা যায় অনেক অনেক বড় করে। এই জ্ঞানের বদৌলতে আজ মানুষের এত সাফল্য। পৃথিবী ছেড়ে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। মানুষের এত দিনের সঞ্চিত জ্ঞান ধরে রাখার ব্যবস্থাও করেছে জ্ঞান দিয়ে। বই পুস্তক সহ বিভিন্ন ভাবে। তাই এখন আর শূন্য থেকে জ্ঞান অর্জন করতে হয় না। লক্ষ বছরের সঞ্চিত জ্ঞান অল্প দিনেই আয়ত্ব করতে পারে মানুষ। বিজ্ঞানি রন্টি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । আশ্চর্য ও গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য দিয়ে বিশ্ববাসীকে অবাক করেছিলেন খুব অল্প বয়সে। এই জ্ঞানকে পূঁজি করে খুব সহজেই সামনে এগিয়ে নিয়ে এসেছে আজ বহু গুণ। এর ফলে পূর্বে যে গতিতে বিজ্ঞানের অগ্রগতি হয়েছে। এখন তার অগ্রগতি হাজার গুণ। পৃথিবীর শুরু থেকে ১৮শ শতক পর্যনত বিজ্ঞান যে পথ অতিক্রম করেছে, ১৯শ শতকেই এগিয়েছে তার শত গুণ। ২০১২ সালে সাত’শ কোটি মানুষের জ্ঞানের সমান ছিল একটি কম্পিউটার। এখন একহাজার কোটি মানুষের জ্ঞান সমান একটি কম্পিউটার। পৃথিবীর সমস্ত কাজ এখন কম্পিউটার চালিত। সে তুলনায় আগামী প্রতি এক বছরে বিজ্ঞান এগিয়ে যাবে শত গুণ করে। জ্ঞানের পর জ্ঞানের গাথুনিতে মানুষের জ্ঞানের ভীত এখন অনেক মজবুত।
বিজ্ঞানের দ্রুত উন্নতির ফলে বিজ্ঞানের চোখ চলে গেছে ১০০০০ আলোক বর্ষ দূরের নক্ষত্রে। পৃথিবীর অনেক কিছুই এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। জয় করেছে প্রকৃতির অনেক শক্তি। আমাদের সৌরজগৎ সমন্ধে জেনেও তার বাইরে অনেক গ্রহ নক্ষত্রের জন্ম বর্তমান অবস্থা আবহাওয়া চলাচন গঠণ আকৃতি এখন মানুষের জানা। মানুষ জেনেছে এই পৃথিবী একদিন ধ্বংশ হবে। পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকবে না। ব্লাকহোল গ্রাস করবে পৃথিবী চন্দ্র সূর্য এমনকি আমাদের সৌরজগৎ। তখন মানুষ নামের কোন চিহ্ন থাকবে না। তাই মানুষ জাতীর টিকে থাকা নিয়ে এই মানুষরাই ভাবছে শতশত বছর ধরে। খুঁজে ফিরছে এমন একটি স্থান যেখানে মানুষ জাতীর বংশ রক্ষা হবে। বাঁচবে প্রাণ। তার জন্য চাই পৃথিবীর মতোই উপযুক্ত একটি গ্রহ। কিন্তু আজ পর্যন্ত তেমন কোন সন্ধান খুঁজে পায়নি কেউ । নিশ্চিত হতে পারেনি পৃথিবীর কোন বিজ্ঞান সংস্থা। পূর্বে ধারণা করত হয়তো অন্য কোন গ্রহে প্রাণ আছে। এখন মানুষের প্রয়োজনে, বাঁচার তাগিদে খুঁজছে প্রাণ রক্ষাকারী ভিন্ন কোন গ্রহ।
ইতঃমধ্যেই পূর্বের বৈজ্ঞানিকদের ধারণ অনুযায়ী শুরু হয়েছে পৃথিবীর বৈরী আবহাওয়া। ঝড় বৃষ্টির মতো কিছু প্রাকৃতিক শক্তি পরিচালনার ক্ষমতা এখন মানুষের হাতে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সমস্যা হল, হাজার বছর ধরে খনি থেকে বিভিন্ন পদার্থ উত্তলন এবং ভূগর্ভস্থ পানি উঠানোর ফলে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ফাঁকা হচ্ছে দিনের পর দিন। যেখানে মাটি অথবা অন্য কোন পদার্থ দিয়ে প্রাকৃতিক নিয়মে পূর্ণ থাকার কথা। সেখানে হচ্ছে ফাকা। ঢুকছে বায়ু ও পানি। ফলে মাটি মাটিকে ধরে রাখতে পারছে না। হারিয়ে ফেলেছে আঁশ। কমে গেছে মাটির উর্বর ও জমাট শক্তি। পৃথিবীর ঘুর্ণনের ফলে মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে চাপ সৃষ্টি হয়ে ফাঁকা স্থান গুলো সংকোচিত হয়ে শূন্য স্থান পূরণ করতে দেবে যাচ্ছে পৃথিবীর উপরি পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থান । গ্রীনহাউস প্রতিক্রিয়া, নিউক্লিয়ার ব্যবহারে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর আবহাওয়া, গঠণ। টেকনো প্লেট গুলো দেবে সৃষ্টি হচ্ছে বড় বড় সুনামি।
গ্যাসীয় পরিবর্তনে পৃথিবীর জমাট বাঁধা বরফ গলে সমুদ্রের পানি বেড়ে গেছে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে মালদ্বিপ সহ কয়েকটি দেশ। বাংলা দেশের দক্ষিণাংশ তলিয়ে গেছে সাগর জলে। জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন সহ বহু দেশ পানিতে ডুবু ডুবু। ইন্দোনেশিয়া, জাপানের চাইতেও বড় বড় সুনামী হয়ে গেল কয়েকটা। ২০১১ সালে প্রফেসর টমজর্ডান এর ধারণা অনুযায়ী ২০৪৫ সালে ঘটে গেল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সেন্টাল ক্যালিফোনিয়ায় ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামীতে ধ্বংশ হয়ে গেছে ক্যালিফোনিয়া। প্রাণ হারিয়েছে কয়েক কোটি মানুষ। ইন্দোনেশিয়ায় সুনামীতে সুমুদ্রে দেবে গেছে অর্ধেক দেশ, ২০৪৮ সালে। ভূমিধ্বশ, ভূমিকম্প, সুনামী, এমন বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন নিত্য নৈমত্বিক ব্যাপার। পৃথিবীর উপর মানুষের অত্যাচারের মাত্রা এত বেড়ে গেছে যে পৃথিবী আর সহ্য করতে পারছে না। তাই এমন বৈরী হয়ে উঠেছে। নিচ্ছে প্রতিশোধ। ২০৫৪ সালের মধ্যে পৃথিবীর স্থল ভাগের ২৫% ধ্বংশ হয়ে ডুবে গেছে জলে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই’শ পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ধ্বংশ হয়ে যাবে পুরো পৃথিবী। সংকোচিত হয়ে পৃথিবীর নিজ কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়বে মহাশূন্যে। গ্রাস করবে ব্লাগহোল। মানুষ অনেক জ্ঞানের অধিকারী হলেও এই প্রকৃতির ধ্বংশ যজ্ঞ থেকে বাঁচার কোন উপায় বের করতে পারেনি। বিজ্ঞানের অনেক উন্নতি হলেও প্রকৃতির শক্তির কাছে মানুষ বড় অসহায়।
নাসার বৈজ্ঞানিক গবেষক একজন বাঙালী। নাম রন্টি। নিজের জ্ঞান গবেষণার সাফল্যের জন্য অল্প বয়সে হয়েছিলেন নাসা গ্রুপের প্রধান, ২০৪৭ সালে। তিনি এখন পৃথিবীর মানুষের মধ্য মণি। তার উপর নির্ভর করছে এই মানবজাতীর টিকে থাকার জন্য উপযুক্ত আবাস খোঁজার ভবিষ্যৎ। যদি তিনি একটি উপযুক্ত গ্রহ আবিষ্কারের ঘোষণা দেন তাহলেই রক্ষা। একহাজার কোটি মানুষ তাকিয়ে আছে তার মুখের দিকে। কারণ এখন তিনি যে মিশন পরিচালনা করছেন এখানেই রন্টি দেখছেন তার সম্ভাবনা।
পৃথিবীর ধ্বংশাত্বক ও শ্বাস রুদ্ধকর পরিসি'তির মুহূর্তে বিজ্ঞানী রন্টি ২০৪৮ সালে আবিষ্কার করেছিলেন, চমৎকার গঠণ আকৃতির একটি গ্রহ। তার নাম অনুসারেই গ্রহটির নামকরণ হয়েছিল রন্টিস। এত দূরের গ্রহে যাওয়ার জন্য পূর্বে মহাকাশ যানের গতি নিয়ে ছিল একটি বিরাট বাধা। ১৯০০ সালের আগেই অনেক বৈজ্ঞানিক গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ছুটে বেড়ানোর উপযুক্ত যান তৈরীর চেষ্টা করেছেন। আদি কল্পনার বাস্তব রূপ দিতে। ২০১২ সালের আগে তারা চাঁদ এবং মঙ্গলে সফল হলেও, দূরের গ্রহে কোন যান পাঠাতে পারেনি। ২০৫০ সালে কিছু বিজ্ঞানী তার সমাধন করেছেন। তৈরী করেছিলেন অত্যধুনিক সুপার সনিক একটি যান। পূর্বের তুলনায় তার গতি অবিশ্বাস্য রকম বেশী। ২০৫০ সাল থেকে ২০৫৪ সালের মধ্যে আমাদের সৌরজগতের সবকটি গ্রহ উপগ্রহে স্পিড রোবট যান দিয়ে সফল অভিযান পরিচালনা করেছেন রন্টি । তার পর ২০৫৫ সালে মহাকাশ যানটি আরো উন্নত হয়ে আসে স্পীড রোবট১নামে । তার পর তিনি শুরু করেন সব চেয়ে বড় ও কঠিণ চ্যালেঞ্জ। রন্টিস ‘মিশন 2080’। ডিসেম্বর মাসের দশ তারিখে রন্টিস এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে, স্পিড রোবট১। মানুষের করতালিতে মুখরিত হয় সারা বিশ্ব।
স্পীড রোবট১ এর পাঠানো ছবি তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি দিতে থাকেন চমকপ্রদ সব তথ্য। রন্টিস গ্রহটি আকারে পৃথিবীর ১২ গুণ বড়। তার রয়েছে তিনটি উপগ্রহ। রন্টিয়াস১ রন্টিয়াস২ ও রন্টিয়াস৩। রন্টিস এবং তার তিনটি উপগ্রহ এক উপাদানেই তৈরী। বিজ্ঞানী রন্টি প্রমাণ করেছেন রন্টিস সৃষ্টি হয় একশত পাঁচ কোটি মিলিয়ন বছর আগে। সৃষ্টির সময় উত্তপ্ত ও নরম অবস্থায় প্রচন্ড বেগে ঘুরতে ঘুরতেই এক সময় ছিটকে পড়ে রন্টিয়াস১ । তাই এর আকার সবচাইতে বড় প্রায় পৃথিবীর সমান। তার পর জন্ম হয় রন্টিয়াস ২ এবং সর্বশেষ রন্টিয়াস ৩ জন্ম হয় ছোট আকারে। তার অবস্থান হয় রন্টিয়াস ত্রয় এর মধ্যে সবচেয়ে দূরে। তার মধ্যাকর্ষণ শক্তি কম থাকাতে দূরে চলে যায়। রন্টিসএর আকর্ষণে রন্টিসকে ঘিরেই আবর্তন করে ঘুরতে থাকে রন্টিয়াস ত্রয়। রন্টিস তার তিন টি উপগ্রহ নিয়ে আলফা সেন্টেরি ‘বি’ কে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এদের নিজনিজ কক্ষ পথে সমান্তরাল ঘুর্ণনের ফলে এই গ্রহ এবং উপগুহ গুলির ঘুর্ণন গতি কমে আসে। এবং একটি স্থিতির মধ্যে এখনো সেন্টোরি ’বি’ কে ঘিরে নিদৃষ্ট সময়ে ১২২৫ দিনে একবার তার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। আবর্তন করে।
সেন্টোরি ‘বি’ থেকে রন্টিসএর দূরত্ব প্রায় ৪৪ কোটি কি.ম। তার সূর্য রন্টিসএর আকারে ৫৮ গুণ বড়। তার যেমন রয়েছে উজ্বল আলো তেমন উত্তাপ। জীবনের জন্য এই আলো ও উত্তাপ খুব প্রয়োজন। প্রাণের উপযুক্ত স্থান । বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা পৃথিবীর বাতাসে অক্সিজের মাত্রার চাইতে ১.৪৬ গুণ বেশী। এ ছাড়াও রয়েছে প্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য গ্যাস। ও বায়ু প্রবাহ। পৃথিবীর পাঁচ দিন সমান রন্টিস এর একদিন। তিনটি উপগ্রহ থাকাতে গড়ে প্রতি ৩০ ঘন্টা পর পর একএকটি চাঁদ উঠে। নিজনিজ কক্ষপথে ঘুর্ণনের ফলে কোন কোন সময় দুটি চাঁদ এক সাথেও দেখা যায়। রন্টিয়াস ত্রয়ের প্রতিফলিত আলো ঠিক পৃথিবীর চাঁদের আলোর মতোই আলোকিত করে রন্টিসএর অন্ধকার আকাশ।
স্পীড রোবট১ নামের এই আকাশ যানের গতি আলোর গতির সমান নয়। কিন্তু বিজ্ঞান বিশেষ প্রক্রিয়ায় গতি বাড়িয়েছে বহু গুণ। তার রয়েছে যথেষ্ট নিরাপত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক যন্ত্র। যানটিতে আছে এত অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপতি। এত উন্নত যন্ত্রপাতির ধারণা ২০৪৫ সালেও ছিল অকল্পনীয়। ২০৪৬ সাল থেকে ২০৪৮ সালের মধ্যেই তৈরী হয়েছে এই যন্ত্র। ২০৫০ সালে এসেছে এর আরো উন্নত সংস্করণ। যানটি নিজেই একটি রোবট। অনেক গুলো রোবটের সমন্নয়ে গঠিত রোবট যান স্পিড রোবট১। তার প্রয়োজনীয় কাজগুলি সে নিজেই করতে পারে। তার যেকোন ধরনের ত্রুটি সারাতে পারে। তাপ চাপ বায়ু মেঘ বৃষ্টি আলো অন্ধকার শীত কোন বস্তুর দূরত্ব সময় এমন অনেক সেন্সর আছে তার শরীরে। রয়েছে পৃথিবীর সাথে সর্বক্ষণিক যোগাযোগের সু-ব্যবস্থা। যার ফলে সে নিজেই বিপদ বুঝে তার সঠিক গন্তব্যে চলতে পারে। অসংখ্য উল্বকা পিন্ড তার যাত্রা পথে বাঁধা হয়েছিল। সে নিজেই বিপদ বুঝে গুলি করে অথবা পাশ কাটিয়ে চলে গেছে তার নিদৃষ্ট পথে। দ্রুত গতির এই বিশেষ সুপার সনিক স্পিড রোবট১ নামের প্রথম যানটি তিনি পাঠিয়েছিলেন রন্টিসএ ২০৫৫ সালে। ৪.৩ আলোকবর্ষ দূরের এই রন্টিস এ যেতে সময় লেগেছে মাত্র পঁচিশ বছর। আজ রন্টিতে পা রেখেই রোবটটি তার নতুন রন্টিস গবেষণার কাজ শুরু করেছে। উন্নত মানের ছবি আলোর পরিমাণ তাপমাত্রা আবহাওয়া সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে। তার যাত্রার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত। আর একের পর গবেষণায় সাফল্য এনে দিয়েছে প্রাণের উপযুক্ত একটি গ্রহ নিশ্চিত করতে।
স্পিড রোবট১ ও তার আরোহীদের পাঠানো তত্ব ও তথ্য বিশ্লষণ করে বিজ্ঞানী রন্টি তার গবেষণার ফল প্রকাশ করে এসেছেন নিয়মিত। তার মধ্যে সফল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন ২০৬০সালে। রন্টিস একটি শান্তু লাল গ্রহ। সেখানে রয়েছে তরল জল। প্রবাহিত হয় বায়ু। দিনের তামমাত্রা ৭০-৮০ ডিগ্রির উপরে নয়। এবং রাতের তাপমাত্রা মাইনাস ১৭ ডিগ্রি। তবে গ্রহটির শেষ অংশে সব সময় তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি। গ্রহের বিভিন্ন অংশে তাপমাত্রা দিনে রাতে ও বছরের বিভিন্ন সময় কমবেশী হয়। গ্রহ সৃষ্টির মুহূর্তে এই গ্রহের তাপমাত্র ছিল ২৫০০ থেকে ৩২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোটি কোটি বছর অকিক্রম করার পর বর্তমান তাপমাত্রায় এসেছে। রন্টিয়াস ত্রয়এর তাপমাত্রা একি রকম। বিজ্ঞানী নিশ্চিত হয়েছেন এগুলো ‘গোল্ডিলকস জোন’। সেই অনুসারে গবেষণায় জীবন ধারণের জন্য উপযুক্ত বলে ঘোষণাও দিয়েছেন ২০৭০ সালে। এই দশ বছরে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন রন্টিস এ জীবন ধারণ সম্ভব। পৃথিবীর একহাজার কোটি মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছেন।
২০৮৪ সালের ১৪ই এপ্রিল থেকে ২০৮৪ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্তু কোন যোগাযোগ ছিল না। কয়েক ফুট বরফে স্থরে পুরো যানটি ঢেকে গিয়েছিল। পৃথিবীর সাথে সব যোগাযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন। ফলে কোন যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ভয়েজ কল আসাযাওয়া বন্ধ ছিল। কোন ছবি পাঠাতে পারেনি স্পিডরোবট১। এই কটি মাস এক উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটান পৃথিবীর মানুষ। ১ আগষ্ট থেকে যখন বরফ কমতে শুরু করে তখন নতুন আশায় বুক বাঁধে বৈজ্ঞানিকটিম। বরফ দেখেই বিজ্ঞানী রন্টি নিশ্চি হন এখানে প্রাণ বাঁচা সম্ভব। তার পর ২৩ আগষ্ট যখন ছবি পাঠাতে শুরু করে তখন ভয়েজ কলও আসতে শুরু করে। তার মাত্র ১৪দিন পর রন্টিসএর মাটি ছোঁয় স্পীড রোবট১। সমস্ত পৃথিবী জুড়ে হৈচৈ শুরু হয়। মানুষের এত দিনের একটি আশা পূরণ হয়। তখন ছিল রাত। ছবিগুলো অন্ধকার হলেও আকাশে তারার অবস্থানন দেখতে পৃথিবীর আকাশের চাইতেও পরিষ্কার তাই এত দূর থেকেও তারার আলো পৃথিবীতে আমরা দেখতে পাই। করতালির মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানায় স্পিডরোবট১ এর আরোহীদের। সারা পৃথিবী জুড়ে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। প্রাণীর জীবন ধারনের উপযুক্ত আবহাওয়ার একটি গ্রহ। আজ ১০/৮/২০৮০তারিখে স্পীড রোবট১ অবতরণের মধ্য দিয়ে এসেছে তার সাফল্য।
বিজ্ঞানী ২০৫৪ সালে গবেষণায় প্রমাণ করে দেখেছিলেন রোবট যানটি আমাদের সৌরজগতের বাইরে গেলে তার গতি বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। ঐ সব সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহের আকর্ষণ ক্ষমতা পৃথিবীর আকর্ষণের অনেক গুণ বেশী। তাই তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন রন্টিতে যেতে সময় লাগবে ত্রিশ বছর। তার ধারণার সঠিক তাই পাঁচ মাস কম সময় লাগল।
অল্প বয়সি দশ জন নরনারী মহাকাশচারী হয়েছিল সে যানে। এই পঁচিশ বছরে কয়েক জন মারা গেলেও বাকীরা সুস্থ । সন্তানও জন্ম দিয়েছে স্পীড রোবট১ মহাকাশ যানে। সর্বশেষ মোট ১৪ জন এখনো জীবিত আছে। আজ যারা রন্টিস এ পা রাখল তারাই হলএ গ্রহের নতুন এবং গর্বিত রন্টিস মানব।
পৃথিবীর এই ক্ষুদ্র মানুষের কোন কল্পনাই বিফলে যায়নি। বাস্তব রূপে তা ধরা দিয়েছে বিজ্ঞানীদের অক্লনত্ পরিশ্রমে। কল্পনা বিলাসী এই মানুষ গুলোর হাতে। তার সত্য ও বাস্তব রূপ এই সাফল্যমন্ডিত গবেষণা। আজ নতুন প্রাণের উপযুক্ত আবাস স্থান হল রন্টিস। সাক্সেসফুল মিশন ‘রন্টিস 2080’।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহমেদ সাবের
চমৎকার লেখা। মনে হলো সত্য ঘটনার উপর সংবাদপত্রে একটা রিপোর্ট পড়ছি। কল্পনাকে এমন বিশ্বস্ত রূপ দেয়ার জন্য গল্পকার অভিনন্দন পাবার যোগ্য। বেশ ভাল লাগল গল্পটা।
হাবিব রহমান
বাহ! চমৎকার বৈজ্ঞানিক তথ্য সমৃদ্ধ একটা গল্প। তবে একটা বিষয় খুব মজা লেগেছে, এত বছর পরও বাঙ্গালী চরিতের কোন পরিবর্তন হয় নাই। নাসার প্রধান হয়ে রন্টি তার সব আবিস্কার এর নাম নিজের নামে করে নিয়েছে..হা হা হা...
তানি হক
পান্না ভাইয়ের সাথে আমিও একই কথা বলছি..নূরী ..এটা কল্পকাহিনীর চেয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্যসমৃদ্ধ একটা লেখা হয়ে উঠেছে..তোমার এই গল্পটি পরলে ..যে জীবনে সাইন্স ফিকশন লেখে নি সেও সাহস করে ..সাইন্স ফিকসন লিখায় আগ্রহী হয়ে উঠবে ...কারণ ..অনেক অনেক শিক্ষানীয় শব্দ ও লাইন তুমি গল্পে ব্যবহার করেছ .. যা ..এক সাথে কথাও খুঁজে পাওয়া মুস্কিল .. অন্তত আমি তো আমার নিজের অনুভুতিতে এটাই অনুভব করছি ..সব শেষে ..একটা কথা বলতে চাই যে ..সংখ্যা যেহেতু কল্পকাহিনী ..তাই কল্প ই মেইন থিম ..তাই সে ব্যাপারে কিছু বলিনা ...অনেক অনেক দোয়া ..আমার মিষ্টি ছটাপু র জন্য ..প্রেরণা করবে যান প্রাণ দিয়ে ..আগামীতে তোমাকে আরো আরো ..সাহিত্য উচ্চতায় দেখেতে চাই ...ধন্যবাদ
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
অসাধারণ আপনার বিজ্ঞানের তথ্য ভান্ডার...অত্যন্ত ভাল লাগল ...."স্পীড রোবট১ নামের এই আকাশ যানের গতি আলোর গতির সমান নয়। কিন্তু বিজ্ঞান বিশেষ প্রক্রিয়ায় গতি বাড়িয়েছে বহু গুণ।"....এখানে কল্পনার যাদু দিয়ে গতি বাড়ানোর ব্যাপার ছিল যা কিনা পাশ কাটিয়ে 'বিষেশ' কথাটা দিয়ে সেরেছেন ....কিন্তু আপনার সুযোগ ছিল....যাইহোক দিপা আপনাকে অনেক অনেক ধণ্যবাদ.............
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।